• সাম্য রাইয়ান
বৃষ্টি যখন ভিড় করে আসেআঁখ রোশেরেনিডে পায়ের তুলতুলেতখন তমাকে চম্মক ট্রেনদোলনেসমস্ত খুন ঢুকে তখন পড়া বইকে রাঙিয়ে দেয়গোয়েন্দারা বেরিয়ে পড়ে ট্রেনশোলার ছদ্মেআগুন যেমন ভালবাসে প্রতিবেশকেবেডরুমের অ্যালার্ম বাজতে থাকে তোমার উলঙ্গেতোমাকে আরো বেশি করে পাই যাদুঘর ভিজে গেলে—যাদুঘর / বারীন ঘোষাল
কিছু মৃত্যু, আমাকে স্তব্ধ করে দেয়৷ আমি কঠিন বরফের মতো চুপ হয়ে যাই৷ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি৷ বুঝতে পারি না আমার কী করা উচিৎ! বারীন ঘোষালের মৃত্যু আমাকে এমনই রূঢ় বাস্তবতার ভাগাড়ে নিক্ষেপ করেছে৷ তার পর থেকেই অস্বস্তি হচ্ছে, চারিদিকে কেমন একটা গন্ধ গন্ধ পাচ্ছি৷ ভাগাড়ে গন্ধই তো থাকবে৷ তবুও, সুগন্ধ ছাড়িয়া দুর্গন্ধে কে থাকিতে চায় হে, কে থাকিতে চায়? বারীন ঘোষাল (৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৪—২৯ অক্টোবর, ২০১৭) মৃত্যুবরণ করলেন৷ প্রথমত আমার খুব মন খারাপ হলো৷ কষ্ট হলো৷ তারপর, ক্রমাগত, প্রতিদিন, আমি অস্বস্তি অনুভব করলাম৷ দু’রাতে ঘুমুতে পেলাম না গোপনে! দুপুরে ভাতঘুমও উধাও! কিন্তু আমি এর কারণ জানি না কিছু৷
আমি আমার সম্বন্ধে কিছু বলব না। রুচিতে বাধে। আমার কোনো ঢাক নেই। অন্যেরা বলবে। একটা কথাই বলব, আমি বাংলা কবিতাকে ডিরেইল করতে এসেছি। আমি কবিতার ভিলেন। এখন লোকজন বলছে আমি ছেলেধরা। গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ছোট কবিদের ধরে বেড়াই। তুমিও সাবধান থাকো।—বারীন ঘোষাল
বারীন ঘোষাল কে? আমি কি জানি এই প্রশ্নের উত্তর? যদি বলি, জানি না, সেক্ষেত্রে যেমন উত্তর ঠিক; অপরদিকে যদি বলি, জানি, সেক্ষেত্রেও উত্তর ঠিক৷ কেননা আমার চোখে বারীন ঘোষাল প্রধানত একজন কবি; সম্পূর্ণ মুক্ত পরিসরে ‘নতুন-কবিতা’-নির্মাতা৷ তিনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্য; করেছেন অনুবাদও৷
আমি তার খুব বেশি কবিতা অবশ্য পড়ার সুযোগ পাইনি৷ সব মিলে হয়তো একশ’র কাছাকাছি হবে৷ আর যদি ভুল না করে থাকি তাহলে দশ–পনেরোটি গদ্য পড়েছিলাম৷ তাঁর বিষয়ে আমার পড়াশুনা বলতে এ-ই৷ জনাব ঘোষালের কবিতা আমি কোথায় পড়েছি প্রথম, তা মনে করার চেষ্টা করলাম৷ বাংলাদেশের দুটো লিটল ম্যাগাজিনের কথাই শুধু মাথায় আসছে; দুটোই যশোর থেকে প্রকাশিত; ‘প্রতিশিল্প’ ও ‘জঙশন’৷ সম্ভবত এই দুটোতেই পড়েছিলাম৷ তারপর জঙশনে ধারাবাহিকভাবে, মানে প্রতি সংখ্যায় থাকতো তাঁর কবিতা/গদ্য৷ অন্তত গত ৪/৫ বছর ধরে এমনটা দেখে আসছি৷
ওনাকে নিয়ে কিছু মানুষের ছোট ছোট স্মৃতিকথা পড়েছি অনলাইনে; তাতে করে অমনটা মনে হলো৷ বোধহয়, শিবের গীত অনেক হলো৷ এবার মূল কথায় আসি৷ যে কারণে এত কথা বলা সেটা হলো, তাঁর কবিতা আমার ভাল লাগত৷ না হলে তাঁর কবিতা চোখে পড়তেই পড়ে ফেলতাম কেন! তাঁর কবিতার সাথে আমি যে পরিচিত, এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জঙশনের৷ নিয়মিত পড়তাম এবং অন্যকেও পড়াতাম৷ এই বছর থেকে জঙশনে আর থাকবে না তাঁর কবিতা! ভাবতেই কেমন ভয়ংকর শিহরণ তৈরি হচ্ছে! জানি না কেন, ভয় করছে৷ মনে হচ্ছে (যেন) আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ এত সহজে মরে গেলেন! আর দেখা হবে না জঙশনে? কথা হবে না কবিতায়?
—শুনে ভাল লেগেছিলো৷
আজ চুপসে গেছি দাদা৷ প্রতি জঙশনে তো প্রায় পাশাপাশি ছাপা হতো আমাদের কবিতা৷ এখন ওই শূন্যস্থান কি ফাঁকাই থাকবে? এ অসম্ভব কি সম্ভব!
৩০ অক্টোবর ২০১৭
0 মন্তব্যসমূহ
প্রাসঙ্গিক ও মার্জিত মন্তব্য করুন