গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ চেয়েছিলেন মৃণাল সেন তাঁর গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করুক

জন্মশতবর্ষে মৃণাল সেনের ছবি
মৃণাল সেনের ছবি তুলেছেন তারাপদ বন্দোপাধ্যায়

সালটা ১৯৮২। ফ্রান্সের কানে তখন চলছিলো বিশ্বখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসব। সেই উৎসবেই বিচারক হিসেবে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত লাতিন কথাসাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ও আমাদের মৃণাল সেন। এর আগের বছরেই মৃণাল সেন তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’র জন্য বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বিয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

সেখানেই তাদের দুজনের প্রথম দেখা। দুজনের মধ্যে আলাপের একপর্যায়ে তা রূপ নিলো বন্ধুত্বে। এর পরের বছরেই মৃণাল সেনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘খারিজ’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পেল বিশেষ জুরি পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে কিউবার হাভানায় দুজনের দেখা হলো ফের। ততোদিনে মার্কেজ ও মৃণাল সেন হয়ে গেছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

আড্ডার এক ফাঁকে মার্কেজ মৃণাল সেনকে তাঁর লেখা উপন্যাস 'অটাম অব দ্য পের্টিয়ার্ক' এর উপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুরোধ করলেন। একই সঙ্গে তিনি এও বললেন এ চলচ্চিত্রে কাহিনীকার হিসেবে তিনি কোনোরূপ সম্মানীও গ্রহণ করবেন না। জবাবে মৃণাল সেন সে অনুরোধ সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনার উপন্যাসটি আমি পড়েছি। কিন্তু গল্পে সমাজ এবং চরিত্র তো বটেই গল্পের মেজাজটিও এতোটাই লাতিন যে তা ভারতের প্রেক্ষাপটে আনা প্রচণ্ড দুরূহ।

এর আগের বছরেই মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র 'আকালের সন্ধানে' বিশ্বখ্যাত বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার বিয়ার পেয়েছিলো। তখন থেকে মার্কেজ চেয়েছিলেন মৃণাল সেন তাঁর উপন্যাসটির উপর একটি চলচ্চিত্র নির্মান করুক।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যেখানে স্ট্যানলি কুবরিকের মতো সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার মার্কেজের গল্পের উপর চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য মার্কেজের কাছে বেশ কয়েকবার অনুমতি চেয়েও অনুমতি পাননি। মার্কেজ চাইতেন না তাঁর গল্প কিংবা লেখা নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র তৈরী করুক। অথচ তিনি মৃণাল সেনকে নিজে সেধে দিতে চেয়েছিলেন।

আজ থেকে শত বছর আগে ফরিদপুরে জন্ম নেয়া এই কিংবদন্তি বাংলা চলচ্চিত্রকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব কাতারে, অথচ মনে প্রাণে তিনি আজীবনই ছিলেন আপ্রাণ বাঙালি। যিনি ভেঙে দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের সকল গদবাঁধা ব্যাকরণ ও চিরায়ত কৌশল। চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করলেন নিজস্ব ধারা, নিজস্বতার ধাঁচ আর নিখাদ আদর্শ।

পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর শহরের স্বাধীনতা অনুরাগী এমন এক পরিবারে তাঁর জন্ম, যে পরিবারটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে জড়িয়ে। তাঁর মা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের জনসভায় উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। স্মৃতিকথায় সেই শৈশব নিয়ে পরবর্তীতে স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছিলেন, ‘তখন দেখেছি কত অসংখ্য লোক আসতেন আমাদের বাড়িতে। আসতেন সে-সব লোক, যাঁরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যাঁদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ফলে আমাদের বাড়িতে ক্ষণে ক্ষণে পুলিশের তল্লাশি চলতে লাগল। কী করে মানুষ পালিয়ে বেড়ায় এটা আমি খুব ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি।’

স্কুলে থাকা অবস্থায় তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই আসতেন তাঁর বড় দাদার বন্ধু পল্লীকবি জসীমউদদীন। মৃণাল সেনরা কবি জসীমউদদীনকে ডাকতেন "সাধুদা" বলে। একবার তাঁর বড়দা জসীমউদদীনের একটি কবিতা তাঁর বাবাকে পড়তে দিলেন। দশ লাইনের সেই কবিতাটি পড়ে মৃণাল সেনের বাবা বললেন ‘ভালো হয়েছে কবিতাটি। কিন্তু এতে তো অনেক বানান ভুল।’ মজার বিষয় হলো সেই কবিতাটি ছিল  জসীমউদদীনের বিখ্যাত ‘কবর’ কবিতার প্রাথমিক খসড়া। মৃণাল সেনের মা কবি জসীমউদদীনকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষেই মৃণাল সেন পুরোদস্তুর  বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন। যে আদর্শ তিনি গ্রহণ করেছিলেন সেই আদর্শ  জারি রেখেছিলেন জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত। চাকরির শুরুটা হয়েছিলো তাঁর সাংবাদিক হিসেবে, এরপরে ওষুধ বিপননকারী। কিন্তু কোথাও স্বস্তি পাননি। শেষমেশ সেই স্বস্তি এসেছিলো যখন তিনি চলচ্চিত্রের শব্দ প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিলেন।

তাইতো স্মৃতিকথায় মৃণাল সেন লিখেছিলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ছবি দেখতে গিয়েছি, সম্ভবত পাঁচ বছর বয়স। সিনেমা হলের ছাদ তখন টিনের ছিল। নির্বাক ছবি, সাদাকালো। কী যেন, নামটা মনে আসছে না। সম্ভবত নায়িকা আর তার বান্ধবী যখন একটা বিশেষ জায়গায় দৌড় দিল, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। হলের দর্শকেরা সবাই বিরক্ত, আমি দেখলাম নির্বাক ছবিতেই তাদের যেন আনন্দ। কিন্তু ওই যে সিনেমা হলের টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে নায়িকার দৌড় যেন সিম্ফনির সৃষ্টি করল সেদিন। ওই ছোট্ট শিশুটি বুঝে ফেলল চলচ্চিত্রের জন্য শব্দ অপরিহার্য।"

১৯৫৫ সালে রাত-ভোর চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রে অভিষেক। উত্তর কুমার, ছবি বিশ্বাস, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো দুঁদে অভিনয়শিল্পী থাকার পরেও সেই চলচ্চিত্র দেখেনি সাফল্যের মুখ।

রাতভোরের নির্মাণের গল্পটাও ছিলো দারুণ। সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক নায়িকা তখন এস বি প্রডাকশনস নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন কেবল। মৃণাল সেন সুনন্দার কাছে কেবল সহকারী পরিচালকই নন, তাঁর সাংস্কৃতিক প্রবণতাগুলো সম্পর্কে জানতেন সুনন্দা৷ প্রযোজিকা  হিসেবে স্বরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প মৃণাল সেনের কাছে নিয়ে এলেন সুনন্দা।

ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ই সুনন্দার সঙ্গে মৃণাল সেনের সরাসরি পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুনন্দা মৃণাল সেনকে তাঁর এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনার প্রস্তাব দিলেন৷ মৃণাল সেন ও শুরু করলেন চিত্রনাট্যের কাজ। এর মধ্যে সুনন্দাও বেশ কজন প্রচণ্ড জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ঠিক করে ফেললেন। এমনকী উত্তমকুমারকেও তিনি এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্যে সাইন করিয়ে ফেললেন৷ রাজী করালেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, ছায়াদেবী, ছবি বিশ্বাস, জহর রায়ের মতো বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীদেও।

মজার ব্যাপার হলো সেই বছর উত্তমকুমারের ১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিলো।এর ১০টা চলচ্চিত্রই হিট হয়েছিলো।  
যার মধ্যে রয়েছে ‘সবার উপরে’ মতো সুপারহিট চলচ্চিত্রও।  

মৃণাল সেন আত্মজীবনীতে রাতভোরের বিষয়ে লিখেছেন এমনটাই,  ‘কলকাতার এক বিখ্যাত অভিনেত্রী তাঁর প্রযোজিত একটি ছবি পরিচালনা করার জন্যে আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং এ কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে তিনি নিজের ছবিতে অভিনয় করবেন না৷ আমার কিছু লেখা পড়ে তাঁর ভালো লেগেছিল- খুবই ভদ্র৷ এই ভাবেই আমার প্রথম ছবি হল৷ আমার বাবা-মা খুশি, ভাবলেন এত দিনে আমার একটা হিল্লে হল৷ ছবি শেষ হওয়ার আগেই আমার বাবা মারা যান- একপক্ষে ভালোই হয়েছিল, কেননা ছবিটা দেখলে তাঁর নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক হত৷ এত জঘন্য, এত কুত্‍‌সিত ছবি আমি জীবনে দেখিনি৷’

বিখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক ক্রাউডাস কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মৃণাল সেন বলেছিলেন, ‘রাত -ভোর’ ছিল খুবই বাজে একটি প্রজেক্ট। আমার ঐ সিনেমাটা না করাই উচিৎ ছিলো।’

প্রথম চলচ্চিত্রের তিন বছর বাদে নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘নীল আকাশের নিচে’ দিয়েই নিজের সমস্ত অতৃপ্তির উসুল তুলেছিলেন মৃণাল সেন। ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিককার পটভূমিকায় কলকাতায় সমাজের নানা স্তরের মানুষের জীবনের গল্পই ছিল চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। কিন্তু সেই চলচ্চিত্রই খোদ নিষিদ্ধ করে বসেছিল ভারতীয় সেন্সর কর্তৃপক্ষ। যদিও শেষমেশ চাপের মুখে নতি স্বীকার করে দুই মাস বাদে সে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলো তারা। বলে রাখা ভালো ‘নীল আকাশের নিচে’ ছিল প্রথম কোন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্র।

‘নীল আকাশের নিচে’ মৃণাল সেনকে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলো আড় এরপরের বাইশে শ্রাবণ তাঁকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করলো।  দিয়েছিল স্থানীয় পরিচিতি ঠিক তেমনি পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘বাইশে শ্রাবণ’ তাঁকে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক পরিচিতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর পঞ্চাশের মন্বন্তর নিয়েই ছিল বাইশে শ্রাবণের প্রেক্ষাপট। যদিও তা ছড়িয়ে ব্যক্তি মানুষের রসায়ন, মূল্যবোধের অবক্ষয় আর নানাবিধ সংকটে পরিপূর্ণ বাইশে শ্রাবণ হয়ে উঠেছিলো সমসাময়িককালের এক ঐতিহাসিক দলিল। আত্মজীবনে  মৃণাল সেন তাইতো লিখেছিলেন, ‘আমার তৃতীয় ছবি “বাইশে শ্রাবণ” আমাকে তৃপ্তি দেয়। অসাধারণ কিছু নয়, তবু এই ছবি আমার একান্ত আপন।…আমার তখন মনে হয়েছিলো ‘না এবার আর বোধহয় ছবির রাজ্য থেকে বিদায় নিতে হবে না।’ 

অসাধারণ কিছু নয়, তবু এই ছবি আমার একান্ত আপন। দুর্ভিক্ষের করাল প্রভাবে কীভাবে মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, সেটা তুলে ধরাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। এটা এক দুর্বিষহ সময়ের নিষ্ঠুর ছবি। স্বাভাবিকভাবেই এই ছবি বাণিজ্যিক সাফল্যের মুখ দেখেনি। কিন্তু  “বাইশে শ্রাবণ”-এর এক অন্তর্লীন জোরের শক্তি আমার ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্রের প্রেরণা। আমি নিয়মিত ছবি করা শুরু করলাম। আমার তখন মনে হয়েছিলো ‘না এবার আর বোধহয় ছবির রাজ্য থেকে বিদায় নিতে হবে না।’ 

এরপরে মৃণাল সেন যা কিছু নির্মাণ করেছেন তাঁর সবই তো ইতিহাস।  তাঁর চলচ্চিত্র কথা বলতো গণ মানুষের, শোষিত মানুষ, দূর্ভিক্ষ, অভাব, সংগ্রাম, জীবনের বাস্তবতার চরম উপলব্ধির। যিনি ভেঙে দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের সকল ব্যাকরণ, অতঃপর চলচ্চিত্রে তিনি সৃষ্টি করলেনন নিজস্ব ধারা, নিজস্বতার ধাঁচ আর চলচ্চিত্র নির্মাণে অনন্য কৌশল!

মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের কথা বললেই অবধারিতভাবেই উঠে আসবে তাঁর কলকাতা ট্রিলজি। ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’ এবং ‘পদাতিক’। প্রথম দুটি একাত্তরে নির্মিত, আর পদাতিক ১৯৭৩ সালে।  

‘ইন্টারভিউ’ ছিল চিরায়ত নিয়মতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতার মুখে মৃণাল সেনের দেয়া আচমকা এক চড়।  যেখানে আমরা দেখি প্যান্ট শার্টের টাকা জোগাড় করতে না পারায় ইন্টারভিউ বোর্ডে বাদ পড়া ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত এক তরুণকে। যেখানে যোগ্যতার চেয়ে পোশাকই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় নির্ধারক। কলকাতা ৭১ চারটি গল্পের সমন্বয়ের সৃষ্টি। 

মৃণাল সেনের ট্রিলজির প্রথম চলচ্চিত্র ‘ইন্টারভিউ’ আর শেষ চলচ্চিত্র পদাতিকের মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত সামঞ্জস্যতা। পদাতিকে মৃণাল সেন তুলে আনলেন এক নৈতিকতা বর্জিত কমিউনিস্ট কর্মীর চিত্র। যে কিনা একসময় খোদ দলের বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়। ট্রিলজির মধ্য দিয়ে মূলত কলকাতার অস্থির সময়কেই তুলে ধরার প্রচেষ্টা ছিল তাঁর।  

মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধ নিয়ে অতঃপর নির্মাণ ‘এক দিন প্রতিদিন’। যেখানে উঠে এসেছিলো রাতে বাড়ি না ফেরা এক কর্মজীবী মেয়েকে নিয়ে পরিবারের ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠার গল্প।  মৃণাল ক্ষণে ক্ষণে আমাদের উপলব্ধি করিয়েছিলেন কলকাতা শহরে একজন কর্মজীবী নারী কিংবা তার উপর আর্থিকভাবে নির্ভর করা একটি পরিবার কতখানি সঙ্গিন।

মৃণালের সবচেয়ে মানবিক চলচ্চিত্র বলা যায় ‘আকালের সন্ধানে’ চলচ্চিত্রকে।  তেতাল্লিশের মন্বন্তরকে কেন্দ্র করে এক ফিল্ম ইউনিটের চলচ্চিত্রের শুটিং। যাদের লক্ষ্য ছিল দুর্ভিক্ষের চিত্র ফুটিয়ে তোলা। গ্রামের মানুষরা অবাক এবং সন্দেহের মধ্যে দিয়ে তাদের কাজকর্ম দেখে । চলচ্চিত্রটি  যতো এগিয়ে চলে ততোই নতুন করে তৈরি করা অতীতের সাথে বর্তমান অবস্থা মুখোমুখি হয় ।

দেখা যায় ১৯৪৩ সালের সাথে চলচ্চিত্র নির্মাণের সাল তথা ১৯৮০ সালের কি অদ্ভুত এক সম্পর্ক। সময়ের ব্যবধান মৃণাল সেন ঘুচিয়ে দিয়েছেন চোখের পলকেই। আমরা চলচ্চিত্রটির মধ্য দিয়েই উপলব্ধি করতে পারি দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা কতোখানি ব্যাপক ছিল। ‘খারিজে’ মৃণাল ফুটিয়ে তুলেছেন  মনস্তাত্ত্বিক এক বিগ্রহ। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক গৃহকর্মীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃণাল যে ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করেছেন তা অবিশ্বাস্য।

মৃণাল সেন কখনোই নিজেকে ছকবাঁধা চলচ্চিত্রে আবদ্ধ করেননি । ভাষার মাঝেও আঁকেননি বিভাজনের সীমান্তরেখা। বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, কিংবা তেলেগু; যে ভাষাতেই তিনি নির্মাণ রেখেছেন ফুটিয়ে তুলেছেন সেই সংস্কৃতির পরিমণ্ডল। ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি যেমন  অযাচিতভাবে বাংলাকে উপস্থাপন করেননি ঠিক তেমনি অন্যান্য ভাষাতেও রেখেছেন স্বতন্ত্র পরিচয়। 

একমাত্র অস্কার বাদ দিলে বিশ্বখ্যাত কান, ভেনিস, বার্লিন, মস্কো, কার্লোভি, টোকিও, তেহরান, ম্যানহেইম, ন্যিয়ন, শিকাগোর মতো চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে কেবল পুরস্কারই পাননি, ছিলেন বিচারকও। পরনে সাদা সফেদ পায়জামা- পাঞ্জাবী পরুয়া সদা আদর্শবান এই মানুষটি বাংলা চলচ্চিত্রের ঝান্ডা উড়িয়েছেন তাবৎ পৃথিবীতে।

আজ থেকে শতবছর আগে আমাদের ফরিদপুর শহরে জন্ম নেয়া কিংবদন্তিতূল্য এই মানুষটির আজ শততম জন্মদিন। 

শুভ জন্মশতবার্ষিকী প্রিয় চলচ্চিত্রকার। আপনি কতোখানি প্রিয়, আর আপনার কাছে আমাদের কতোখানি ঋণ তা কখনোই বোঝানো সম্ভব না। বিনম্র শ্রদ্ধা আপনার প্রতি। 🙏🙏

[গদ্যলেনের ক্ষমপ্রার্থনা: এই রচনাটি অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো৷ আমরা একে ধরে এনে গদ্যলেনভুক্ত করলাম৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, রচনাটির লেখকের নাম কেউ জানাতে পারলেন না৷ কেউ যদি কমেন্টে রচনাটির প্রকৃত লেখকের নাম উল্লেখ করেন, আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে যুক্ত করে দিবো৷ ধন্যবাদ]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ