অন্তরালের গল্প: অমিতাভ বচ্চনকে প্রথম পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন মৃণাল সেন


পরিচালক খাজা আহমেদ আব্বাসের কাছের বন্ধু ছিলেন, পরিচালক মৃণাল সেন। মৃণাল সেনের বিখ্যাত সিনেমা ‘ভুবনসোম’ মুক্তি পাচ্ছিলো ১৯৬৯ সালে, আর সেই সময় খাজা আহমেদ আব্বাস ‘সাত হিন্দুস্তানী’ নামের একটি সিনেমা বানাচ্ছেন। কিন্তু বানাতে চেয়েও বানাতে পারছিলেন না। 

কারণ নিজের এই সিনেমার জন্য তার দরকার ছিল উৎপল দত্তকে৷ উৎপল দত্ত ডেট দিচ্ছেন না। যেহেতু উৎপল দত্ত ভুবনসোমের শুটিংয়ে ব্যস্ত, ডেট না দেয়ার এটিই ছিল কারণ। 

সমস্যার সমাধানে খাজা সাহেব মৃণাল সেনের দ্বারস্থ হলেন।
–মৃণাল, তুমি ওকে একটু বুঝিয়ে বলে দাও না। তাহলেই তো আমার সিনেমার কাজটা হয়ে যায়!

মৃণাল সেন বললেন- বেশ! বলে দেব। বিনিময়ে আমাকে ভালো কন্ঠস্বরের একটি ছেলে খুঁজে দাও, ভরাট লাগবে কিন্তু! আমার সিনেমার ন্যারেশনের জন্য লাগবে।

দুজনেই দুজনের প্রতিশ্রুতিতে রাজি হলেন শুধুমাত্র মুখের এক কথায়। কোন দলিল দস্তাবেজের সই লাগলো না, কারণ এর সম্পর্কের মূল বুনিয়াদ ছিল বন্ধুত্ব। বন্ধুর মুখের কথাই মোর দ্যান এনাফ। 

মৃণাল সেনের কথায় শেষ পর্যন্ত উৎপল দত্ত রাজি হয়ে খাজা সাহেবকে 'ডেট' দিলেন। আর খাজা সাহেব একজন তরুণ ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন মৃণাল সেনের কাছে। 

সেই ছেলেটি সম্পর্কে মৃণাল সেন পরে বলেছিলেন– ছেলেটি অল্পবয়সী। বিশাল লম্বা আর বেশ রোগা। তবে কণ্ঠস্বর ভালো, বেশ ভরাট। তাকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নিলেন মৃণাল সেন। এরপরে একদিন ছেলেটিকে ডেকে পাঠালেন। ছেলেটি আসার পর মৃণাল সেন তাকে একটি ‘চেক’ দিলেন। ছেলেটি অবাক! ‘চেক কেন?’
শুনে মৃণাল সেন আরও অবাক! ‘আশ্চর্য, কাজ করেছ পারিশ্রমিক নেবে না?’

ছেলেটি বলল ‘না মানে, আপনার কাছে আসার আগেও এরকম কিছু টুকটাক কাজ করেছি, তবে এখন পর্যন্ত কেউ পারিশ্রমিক দেয় নি। এজন্যই এই চেক পেয়ে আমি অবাক ও আপ্লুত!’

নিজের প্রথম সিনেমা সাত হিন্দুস্তানীতে অভিনয় করা, ভুবনসোমে ভয়েস দেয়া সেই রোগাটে ছেলেটি হলেন অমিতাভ বচ্চন। সত্তরের দশকে যার স্টারডমের ঘোড়া সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছোটা শুরু করেছিল আর চলেছিল দীর্ঘদিন এবং যে মানুষটি এখনও কাজ করে যাচ্ছেন, তার প্রথম পারিশ্রমিক এসেছিলেন মৃণাল সেনের কাছ থেকে।

১০০ তম জন্মবার্ষিকীতে মৃণাল সেনকে জানাই শ্রদ্ধা। ❤️

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ