বিধবা বিবাহের প্রসঙ্গে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর বিবাদের কাহিনি


লিখেছেন অরুনাভ সেন

সমাজের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে কোনও ইস্যুতে ইগোর লড়াই খুব বিরল নয়, বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিবাদে জড়িয়ে ছিলেন বিধবা বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়ে। সেই বিবাদে ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর মধ্যে চিরকালের মত সম্পর্ক ছেদ হয়। বিবাদের রেশ থেকে নিজেকে আড়াল  করতে পারেনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ এর মত প্রতিষ্ঠান।

একটা সময় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়  অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু ছিলেন। ছুটি-ছাটায় দুই বন্ধু একসাথে আহার করতেন, বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, মত বিনিময় সবই চলত। তবে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য ও সহযোগিতা ও স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিসৎ- এর মত বিবুধ প্রতিষ্ঠান যে প্রতিষ্ঠান বাঙালির বিদ্যাচর্চাকে পথ দেখিয়েছে। বলা বাহুল্য সাহিত্য পরিষৎ এর ভবনে কোনওদিন পদার্পণ করেন নি আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর পুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু কেন ঘটেছিল বঙ্গসংস্কৃতির দুই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের সংঘাত?সেই কারণ আলোচনার আগে আমাদের বলতে হয় শুধু বন্ধুত্ব নয় দুই পরিবার কে একত্রিত করেছিল সম্পর্কের বন্ধন। অনেকেই বিশ্বাস করেন হরপ্রসাদ কে নাকি সম্মান জানাতে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর পুত্রদের নামের শেষে প্রসাদ যোগ করেছেন! যেমন শ্যামাপ্রসাদ, রমাপ্রসাদ। পিছিয়ে থাকেন নি হরপ্রসাদ তিনি ও নিজের পুত্রের নাম দিয়েছেন 'তোষ' যোগ করে। বড় ছেলে বিনয়তোষ ভট্টাচার্য বেশ বিখ্যাত মানুষ ছিলেন।  তবে অনেক মহল থেকে বলা হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রথা ছিল ঠাকুরদার নামের শেষটুকু গ্রহণ করা। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পিতা ছিলেন সেই সময়কার বিখ্যাত চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদে মুখোপাধ্যায়।

তর্ক -বিতর্ক যাই থাকুক গভীর বন্ধুত্বের উত্তাল স্রোত প্রথম বাধা পেল স্যার আশুতোষ যখন তাঁর বিধবা কন্যা কমলার পুনর্বিবাহের জন্য উদ্যোগ নিলেন, ঠিক এই বিষয়টি একেবারেই ভালোচোখে দেখলেন না হরপ্রসাদ।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় শাস্ত্রজ্ঞ মানুষ তিনি বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে যেসব যুক্তি দিলেন হরপ্রসাদ সেসব খণ্ডন করলেন,ব্যস বন্ধুত্ব বিচ্ছেদের সলতে পাকানো হল। তর্কবিতর্কে সেই ফাটল আরও বড় হল।স্যার আশুতোষ কন্যার বিয়ে পাকা করে হরপ্রসাদের নৈহাটির বাড়িতে গেলেন। হরপ্রসাদ আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি করেন নি, একই সঙ্গে তিনি কথা দিয়েছিলেন কন্যাসমা কমলাকে আশীর্বাদ করবেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।

এরপর চিরতরে বন্ধু বিচ্ছেদের পথ আরও পরিস্কার হল,দুই বন্ধুর পথ হল ভিন্ন, দুজনের আর কোনোদিনই দেখা হয়নি। এতে ক্ষতিটা হল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিসৎ-এর। কলকাতার অনেক বিশিষ্ট মানুষ পরিষৎ থেকে মুখ ফেরালেন। স্যার আশুতোষের দূর্লভ ও মূল্যবান বই পেলো ন্যাশানাল লাইব্রেরি।


পুস্তক ঋণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার: হাসিকান্না হীরাপান্না চণ্ডী লাহিড়ী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ