পিকে সিনেমা ও আজকের বাস্তবতা!

▇  মজিব রহমান


পিকে সিনেমাটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। আশাবাদী হয়েছিলাম– মানুষ হয়তো ভণ্ডবাবাদের দরবারে হাজির হয়ে রং নাম্বার ধরে ফেলবে এবং তাদের মুখোশ খুলতে থাকবে। বিপন্ন হয়ে পড়বে ভণ্ডবাবারা। ভারতের মতো একটি মৌলবাদী দেশে এটি কিভাবে মুক্তি পেল ভেবে অবাক হয়েছিলাম। ভিনগ্রহ থেকে আসা আমীর খান যখন রিমোর্ট হারিয়ে দিশেহারা তখন তাকে আশার বাণী দেয়া হয় একথা বলেই, ‘ভগবান সব জানে’। ভগবানের উপর ভরসা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে রিমোর্ট। শেষ পর্যন্ত ভগবান নিজেই চিচিং ফাঁক হয়ে যান। প্রতারক সাধুবাবা রিমোর্টকেই শীবের অঙ্গবলে প্রচার দিয়ে, সর্বরোগের মহৌষধ বানিয়ে ব্যবসা ফেদে বসেন। ধর্ম তার আশ্রয় এবং প্রতারণা তার হাতিয়ার। এলিয়েনকে মুসলিম বানিয়ে দেয়, তার বিরুদ্ধে জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চায়। আর পিকেকে সাপোর্ট দেন একজন সাংবাদিক পরে তার টিভি চ্যানেল। শুধু মন্দিরই নয়, গীর্জা, মসজিদ, প্যাগোডা সব কিছুরই ফাঁকটা তুলে ধরা হয় ছবিতে। পিকে ছবিতে ভারতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভণ্ডবাবাদের মুখোশ দিয়েছেন। তারা যে প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী- এটা বহুবিধভাবে প্রমাণ করেছেন। যদিও পিকে ছবিতে সব ধর্মকেই ব্যঙ্গ করা হয়েছে। তবুও বুঝি বাংলাদেশে এমন একটি সিনেমা মুক্তি পেতো না, যদিও অনেকে বলবেন- বাংলাদেশে এটা বানানোর সামর্থ্যই কারো নেই। এমনকি চেতন ভগত এর মতো উচু মানের স্ক্রীপ্ট রাইটারও নেই। এ ছবিটির আরেকটি বিষয়ও বিস্ময়কর– ভারতের আর কোন ছবিতেই পাকিস্তানী একজন নাগরিককে এতোটা ইতিবাচকভাবে দেখানো হয়নি। হিন্দু মেয়ের সাথে পাকিস্তানী মুসলমান ছেলের প্রেম এবং সফলতা মেনে নেয়াটাও ভারতের একটি অগ্রগতি মনে হয়েছিল। আমারতো মনে হয়, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মানুষের মনমানসিকতা কাছাকাছি। এরমধ্যে ভণ্ডপীর, ভণ্ডসাধু আর ভণ্ডবাবারা ধর্ম ও রাজনীতি ব্যবহার করে মানুষকে উগ্রমৌলবাদী বানিয়ে ফেলে। দক্ষিণ এশিয়ার সকল ভণ্ডবাবাদের রুখতে হলে এমন সিনেমারই দরকার হবে। পিকে ছবিটি কিভাবে রেকর্ড ব্যবসা করলো? আসলে ভারতে প্রগতিশীল লোক/দর্শক রয়েছে বলেই পিকে সফল হয়েছে কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় অংশই এখনো ছাগু, মূর্খ, মৌলবাদী আর এজন্যই ভণ্ডবাবারা বারবারই সফল হচ্ছে।

আজ আবার উল্টোদিকে চলছে দক্ষিণ এশিয়া৷ এখন পূজিত হচ্ছে মহাত্মা গান্ধীর খুনি নথুরাম গডসে৷ নেহেরুর পরিবর্তে মূল্যায়িত হচ্ছেন প্যাটেল৷ আর প্রগতিপন্থী সিনেমার পরিবর্তে ব্যবসা করছে ইসলাম বিদ্বেষী সিনেমাগুলো৷ এমনকি দর্শকরা বিবেচনায় নিচ্ছে অভিনেতার ধর্মীয় পরিচয়ও৷ কাশ্মির ফাইল থেকে বিস্ট হিন্দি থেকে দক্ষিণ ভারত সর্বত্রই এই প্রচেষ্টা৷ এটা করে ভারতের সংখ্যালঘু  মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার জোয়ার সৃষ্টি করেছে৷ আর তাতেই সুখের জোয়ারে ভেসে বেড়াচ্ছেন হিন্দুত্ববাদী চেতনার কর্ণধার নরেন্দ্র মোদি! মুসলিমদের বহিরাগত প্রমাণ করতে চাচ্ছে৷ অথচ প্রায় সকল মুসলিমই এই ভূখণ্ডেরই মানুষ৷ আরব থেকে আসা মুসলিমদের সংখ্যা খুবই নগণ্য৷ আর্যদের নিয়ে আসা আজকের হিন্দু ধর্মও যে বহিরাগত সেটা কাউকেই জানতে দেয় না৷ ভারতের জন্য বেদও বাহির থেকে আসা, কোরআনও বাহির থেকে আসা৷ কিন্তু এটাই কি সম্পূর্ণ ভারত?

ভারতের একতৃতীয়াংশ ভোট বিজেপির৷ দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলকভাবে ভারতেই সবচেয়ে বেশি প্রগতিশীল মানুষ৷ সবচেয়ে বেশি বৈচিত্রও ভারতেই৷ ধর্মান্ধ রাজনীতি ভারতকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগেও সাইনিং ইণ্ডিয়াই বলা হতো৷ তাদের উন্নয়নের তুলনা হতো চীন ও ব্রাজিলের সাথে৷ আজ সেই রেস থেকে ছিটকে পড়েছে ভারত৷ এমনকি করোনা ভাইরাস সক্রমণে হাজার হাজার মৃতের সৎকারও করতে পারেনি৷ এতোটা খারাপতো দক্ষিণ এশিয়ার আর কারো হয়নি! এটা ভারতের মানুষও উপলব্ধি করে৷ মহাত্মা গান্ধী থেকে চেতন ভগত, বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত, সরোজিনী নাইডু বা ইন্দিরা গান্ধী থেকে অরুন্ধতী রায়তো ভারতেরই৷ ফিদা এফ হোসেন ও সালমান রুশদি ভারতে থাকতে না পারলেও তারাতো এখানেই বেড়ে উঠেছেন৷ ভারততো শুধু রামদেব কামদেবদের নয়৷

ভারতকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়৷ ভারতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঢেউ আছড়ে পড়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বজুড়েই৷ ভারত প্রগতির পথে থাকলে সেই ছোঁয়াও লাগে দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই৷

লেখকঃ সভাপতি, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. লেখকের বামাতি মানসিকতার কারণেই এলোমেলো, খাপছাড়া রচনা পড়ার দু্র্ভাগ্য হল

    উত্তরমুছুন

প্রাসঙ্গিক ও মার্জিত মন্তব্য করুন